বেগ বলতে কী বোঝানো হয় আমরা সবাই সেটা মোটামুটি জানি। কোনো কিছু কত দ্রুত যাচ্ছে তার পরিমাপটা হচ্ছে বেগ। তবে পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বেগের একটা সুনির্দিষ্ট অর্থ আছে এবং বেগের পাশাপাশি আমরা দ্রুতি (speed) নামে আরো একটা রাশি ব্যবহার করি। আমরা যদি দূরত্ব এবং সরণ এই বিষয় দুটো ভালোভাবে বুঝে থাকি তাহলে দ্রুতি এবং বেগ এই রাশি দুটোও খুব সহজে বুঝতে পারব।
দ্রুতি হচ্ছে সময়ের সাথে দূরত্বের পরিবর্তনের হার।
অর্থাৎ তুমি যদি 20 সেকেন্ডে 100 m দূরত্ব অতিক্রম করে থাকো তাহলে তোমার দ্রুতি v হচ্ছে:
দ্রুতির মাত্রা
বেগ হচ্ছে সময়ের সাথে সরণের পরিবর্তনের হার।
অর্থাৎ যদি 20 সেকেন্ডে কোনো নির্দিষ্ট দিকে তোমার অবস্থানের পরিবর্তন হয় 50m তাহলে তোমার বেগের মান হচ্ছে:
বেগ যেহেতু ভেক্টর তাই তার দিকটি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।
বেগের মাত্রা:
এখানে একটা বিষয় লক্ষ করা যেতে পারে, আমরা যদি শুধু রৈখিক গতি বিবেচনা করি তাহলে বেগ আর দ্রুতির মাঝে কোনো পার্থক্য নেই, বেগের মানটিই হচ্ছে দ্রুতি। তোমাদের এই বইয়ে আমরা শুধু রৈখিক গতিই বিবেচনা করব তাই দ্রুতি এবং বেগের মাঝে পার্থক্য খুঁজে পাব না। তাই দ্রুতি এবং বেগের ভেতরকার সম্পর্ক বোঝানোর জন্য রৈখিক গতির বাইরে কয়েকটা উদাহরণ নেওয়া যাক:
2.01 চিত্রে আমরা দূরত্ব এবং সরণ বোঝানোর জন্য একটি আঁকাবাঁকা রাস্তা এবং সেখানে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান দেখিয়েছি। দ্রুতি এবং বেগ বোঝানোর জন্য আমরা সেই একই উদাহরণ নিতে পারি তবে এবারে কতটুকু সময়ে তুমি একটি অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে গিয়েছ সেটি বলে দিতে হবে। ধরা যাক সাইকেলে A থেকে B অবস্থানে আসতে তোমার সময় লেগেছে 20 minutes. তাহলে তোমার গড় দ্রুতি হচ্ছে:
গড় দ্রুতি = অতিক্রান্ত দূরত্ব / সময়
অর্থাৎ,
এখানে লক্ষ করো আমরা দ্রুতি শব্দটি ব্যবহার না করে গড় দ্রুতি শব্দটি ব্যবহার করেছি। কারণ তুমি সাইকেল চালানোর সময় হয়তো কখনো একটু জোরে কখনো একটু আস্তে সাইকেল চালিয়েছ। তাই “তাৎক্ষণিক” দ্রুতি আমরা বলতে পারব না, 20 minutes সময়টুকুর গড় দ্রুতিটুকুই শুধু বলতে পারব।
এবারে আমরা বেগ বের করার চেষ্টা করি। দ্রুতির মতোই আমরা কিন্তু তাৎক্ষণিক বেগ বের করতে পারব না, এই পুরো সময়টিতে তুমি ভিন্ন ভিন্ন বেগে সাইকেল চালিয়েছ। গতি বেশি কিংবা কম হওয়ার কারণে বেগের পরিবর্তন হয়েছে আবার দিক পরিবর্তন হওয়ার কারণেও বেগের পরিবর্তন হয়েছে। এই সবগুলো পরিবর্তন মিলিয়ে গড় বেগের মান হচ্ছে:
গড় বেগ = সরণ / সময়
অর্থাৎ,
তোমরা দেখতে পাচ্ছ এই উদাহরণটিতে গড় দ্রুতির মান থেকে গড় বেগের মান কম। পথটি যদি আঁকাবাঁকা না হয়ে সোজা হতো তাহলে গড় বেগের মান আর গড় দ্রুতি দুটোই সমান হতো। আমাদের এই উদাহরণে তুমি যদি সব সময় একই গতিতে সাইকেল চালিয়ে যেতে তাহলে আমরা বলতাম তুমি সুষম দ্রুতিতে সাইকেল চালিয়ে এসেছ। যখন কোনো কিছু সুষম দ্রুতিতে যায় তখন তার তাৎক্ষণিক দ্রুতি এবং গড় দ্রুতির মান একই হয়ে যায়।
লক্ষ করো, পথটি যেহেতু আঁকাবাঁকা ভাই এই পথে গেলে ক্রমাগত তোমার দিক পরিবর্তন হচ্ছে, তাই এই পথে তুমি সুষম দ্রুতিতে পেলেও সুষম বেগে যেতে পারবে না। শুধু রৈখিক গতিতে সরলরেখায় গেলেই সুষম বেগে কিংবা সমবেগে বাওয়া সম্ভব ।
আরও দেখুন...